মূলঃ নাবিল হাসান (প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, আর-রাইয়ান গ্লোবাল নেটওয়ার্ক)অনুবাদঃ মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান
আমাদের সকলেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে চায়। আর একজন মুসলমানের জন্য এই সফলতা শুধুমাত্র দুনিয়ার সাফল্যই নয় বরং এর সাথে আখিরাতের কামিয়াবী অর্জনও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায়ই আশংকা করি যে, দুনিয়ায় সফলতার জন্য চেষ্টা সাধনা আখিরাতের অর্জনকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। কিন্তু, আমাদেরকে ভীত হওয়ার পরিবর্তে বিষয়টি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া দরকার। একমাত্র পৃথিবীর এই জীবনেই আমরা নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারি। তাই, আমাদেরকে এই দুনিয়ার জীবনে এমনভাবে কাজ করা উচিত যেন উভয় জীবনে আমরা সফলকাম হতে পারি। যেসব অনুসঙ্গগুলো আমাদের সফলতাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে সেগুলো খুজে বের করা প্রয়োজন। কারণ, আমরা যদি সেই অনুসঙ্গগুলো নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হই সেক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া আমাদের জন্য সম্ভব হবে না। আর আমরা সকলেই জানি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই সফলতার পথ খুলে দেয়। তাই আসুন, আমাদের সফলতাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে এমন ১০টি বিষয় জেনে নেইঃ
১. প্রতিদিন কুরআন অধ্যয়ন না করা
সফল মানুষেরা জীবনের সঠিক পথ অনুসন্ধানের জন্য কুরআন অধ্যয়ন করে। হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) কাদিসিয়্যাহর যুদ্ধে মুজাহিদদের তাবুর নিকট দিয়ে হেঁটে যেতেন। যদি তিনি তাবুর মধ্যে থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুনতেন পেতেন, তিনি বলতেন-‘এখান থেকেই বিজয় আসে’। আর যদি তাবুর মধ্যে থেকে কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ না পেতেন, তাহলে তিনি বলতেন- ‘এখানে থেকেই পরাজয় আসে’ (Causes that aid in the memorization of Noble Quran: Page-06)
উপরোক্ত উক্তিটি আমাকে খুবই আশ্চার্যন্বিত করেছে কারণ তারা (রাঃ) ইবাদতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করলেও তাদের সেনাপ্রধান বিজয়কে কুরআন তিলাওয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। কুরআনকে কতটা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা উচিত তা এর মাধ্যমে বোঝা যায়। আমরা জানি যে, আমাদের যে কোন কাজ বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য কুরআন পথ প্রদর্শন করে। কুরআনকে পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করতে পারলে এটা সবক্ষেত্রেই আমাদের পথপ্রদর্শন করবে। আবার আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে আমরা তাঁর উপর ভরসা করার শিক্ষা পাই। অন্যদিকে কুরআনের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলি, আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায় এবং তাঁর উপর নির্ভরতার সাহস হারিয়ে ফেলি। তার পরিবর্তে আমরা ক্ষুদ্র বিষয়াদির উপর নির্ভর করা শুরু করি। যার ফলে আমরা ব্যর্থ হই আর এ ব্যর্থতা যে আমাদেরই অর্জন আমরা তা নিজেরাই বুঝতে পারি না। তাই দেরি না চলুন চিন্তা করি আর নিজের জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
২. সঠিক সময়ে সালাত আদায় না করা
নিজের সালাত নিয়ে চিন্তা করুন। আপনি কি সঠিক সময়ে সালাত আদায় করেন? নাকি মিটিং বা রান্নার জন্য সালাত আদায়ে দেরী করে ফেলেন। আমি নিশ্চিত আপনি নিজেও বিশ্বাস করেন যে, সালাত আদায়ের সময়ে আপনার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা রান্না করা আপনার জন্য কল্যাণকর না। তাই সম্ভবত সালাত আদায়ে বিলম্বের একটাই কারণ থাকতে পারে, আর তা হচ্ছে আপনার অবহেলা। সফল মানুষেরা সঠিক সময়ে সালাত আদায় করে। দেখুন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এ সম্বন্ধে কি বলেনঃ
“তারা এমন লোক- ব্যবসা বাণিজ্য যাদের কখনো আল্লাহ তায়ালা থেকে গাফেল করে দেয় না- না বেচাকেনা তাদের আল্লাহ তায়ালার স্মরণ, সালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফেল রাখতে পারে, তারা সেদিনকে ভয় করে যে দিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টিশক্তি ভীতবিহ্বল হয়ে পড়বে। যারা নেক কাজ করে আল্লাহ তাদের যথার্থ উত্তম পুরষ্কার দিবেন, তিনি তার অনুগ্রহে তাদের যা পাওনা তার চাইতেও বেশী দান করবেন; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে অপরিমিত রিজিক দান করেন।” (সূরা নূর: ৩৭-৩৮)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে একজন সাহাবা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন যে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বলেনঃ
“সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা” (বুখারী: ৫২৭ / মুসলিম: ৮৫)
৩. সুন্নাত সালাত আদায়ে আনন্দ না পাওয়া
অনেকেই নিজস্ব বাড়ি থাকাকে সফলতা হিসেবে পরিমাপ করে। এখন কল্পনা করুন যে, জান্নাতে আপনার নিজের বাড়ি আছে। বরং এর চেয়েও বেশি চিন্তা করুন। ধরুন যদি এমন হয় যে, আপনি প্রতিদিনই জান্নাতে একেবারে নতুন একটা করে বাড়ির মালিক হোন?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে বার রাকাত সালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। সেগুলো হচ্ছে- যোহরের পূর্বে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এ’শার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাকাত” (তিরমিজী: ৩৮০)
৪. সকাল-সন্ধ্যায় যিকির না করা
সফল ব্যক্তিরা সকাল-সন্ধ্যায় যিকির করাকে তাদের প্রতিরক্ষা বলয় হিসেবে ব্যবহার করে। যিকির আপনাকে মানুষ, জীন এবং শয়তান থেকে রক্ষা করে। দুঃচিন্তা, মর্মপীড়া, শয়তানী নজরদারী এবং জাঁদু থেকেও এটা আপনাকে সুরক্ষা দিবে। এক কথায়, সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যা যিকির খুবই প্রয়োজনীয়।
“(হে নবী,) তোমার মালিককে স্মরণ করো মনে মনে, সকাল-সন্ধ্যায় সবিনয়ে ও শঙ্কিত চিত্তে এবং অনুচ্চ স্মরে। আর কখনো গাফেলদের দলে শামিল হয়ো না।” (সূরা আল-আ’রাফ- ৭:২০৬)
৫. নিজের প্রতি যত্নশীল না হওয়া
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“তোমার প্রতি তোমার শরীরের অধিকার রয়েছে” (বুখারী: ৫১৯৯)
আপনি কি আপনার শরীরকে প্রাপ্য অধিকার প্রদান করেন? আপনি কি এর প্রতি যত্নশীল? সফল মানুষেরা নিয়মিত ব্যায়াম করে, বিশুদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“দূর্বল (স্বাস্থ্য সম্পন্ন) মু’মিনের তুলনার শক্তিশালী (স্বাস্থ্য সম্পন্ন) মু’মিন আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়” (মুসলিম: ৬৭৭৪)। তিনি (সাঃ) সতর্ক করে বলেন, “কিয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন না করা পর্যন্ত আদম সন্তানের দু’পা এতটুকু নড়াচড়া করতে পারবে না” তার মধ্যে দু’টি হচ্ছে- ‘তার জীবন’- সে তাকে কিভাবে অতিবাহিত করেছে এবং ‘তার যৌবন’- সে তার কতটুকু সদ্ব্যবহার করেছে। (তিরমিজী: ১৯৬৯)
৬. আত্ম-উন্নয়নে সময় ব্যয় না করা
আপনি কি সকল বাহ্যিক বিষয়াবলী থেকে বিশ্রাম নিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত সময় ব্যয় করেন? বিষয়টা এমন না যে, আপনাকে সবকিছু ত্যাগ করে সন্ন্যাসীর মত হয়ে যেতে হবে বরং এটার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্ম-বিশ্লেষণ করা, সৃষ্টিকর্তার সাথে নিজের সম্পর্ক যাচাই করা, উম্মাহকে নিয়ে নিজের পরিকল্পনা করা, নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া, তওবা করা এবং নিজের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য চেষ্টা করা। এটা এমন হতে পারে যে, আপনি নামাজ শুরুর বেশ আগেই মসজিদে চলে গেলেন বা নামাজের পর মসজিদে কিছুক্ষণ বসে থাকলেন। আবার নিজের বাড়িতেই রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ (রাতের নামাজ) আদায় করার মাধ্যমে আপনি আত্ম-উন্নয়নে সময় ব্যয় করতে পারেন।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আল-কুরআনে বর্ণনা করেনঃ
“নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের (নিখুঁত) সৃষ্টি এবং দিবা যাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (এই জ্ঞানবান লোক হচ্ছে তারা) যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এই সৃষ্টি (নৈপুণ্য) সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে (এবং স্বতস্ফূর্তভাবে তারা বলে উঠে), হে আমাদের মালিক, (সৃষ্টি জগত)-এর কোন কিছুই তুমি অযথা বানিয়ে রাখোনি, তোমার সত্তা অনেক পবিত্র, অতএব তুমি আমাদের জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও।” (সূরা আল-ইমরান ৩: ১৯০-১৯১)
সফল মানুষেরা আত্ম-সমালোচনার জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করে থাকে।
৭. পরিবারের সাথে সময় ব্যয় না করা
আমরা সকলেই ঐ ছোট্ট বালকের গল্পটা জানি যে তার জমানো টাকা দিয়ে তার ব্যস্ত পিতার নিকট থেকে একটা ঘন্টা সময় কিনতে চেয়েছিলো। আপনি আপনার পরিবারকে কতটা ভালোবাসেন সেটা বড় কথা নয় বরং আপনি কতটা আতন্তরিকতা ও যত্ন সহকারে তাদের সাথে সময় ব্যয় করেন সেটাই মূখ্য। সফল ব্যক্তিরা এমনভাবে তাদের পরিবারকে সময় দেয় যেন আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন। হতে পারে আপনি আপনার মায়ের সাথে একত্রে বসে এক কাপ চা খেলেন বা আপনার পিতাকে সাথে নিয়ে একসাথে কিছুক্ষণ হাঁটলেন। আবার আপনার সন্তানকে নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করলেন, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করলেন, নিজের সহোদর ভাই-বোনদের নিয়ে কোথাও ঘোরাঘুরি করলেন বা তাদের সাথে নিয়ে একত্রে জ্ঞানের আলোচনা করলেন। আমার নিকট এটা একটা ভারসম্যপূর্ণ জীবনের পরিচায়ক। তাই, এক্ষুনি পরিকল্পনা করে ফেলুন। কারণ, পুরো পৃথিবী আপনাকে অবমূল্যায়ন করলেও আপনার পরিবার সর্বদা আপনার পাশে থাকবে। তাই, তাদের সঠিক অধিকার আদায়ের চেষ্টা করুন।
৮. দান-সদকা না করা
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“একটা খেজুরের অর্ধেকের বিনিময়ে হলেও নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো” (বুখারী)
সত্যিকারের সফল ব্যক্তিরা নিজেদের যা কিছু আছে সেখান থেকেই সদকা প্রদান করে এবং এটাকে তাদের সম্পদ কমে যাওয়ার পরিবর্তে বৃদ্ধি হিসেবে দেখে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমান সাদকা করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর কুদরতী ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় সমান হয়ে যায় ” (বুখারী)
৯. আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা না করা
সফল ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন কমপক্ষে সত্তরবার আল্লাহর নিকট তওবা করতেন। আপনি কি তওবার শক্তি সম্পর্কে জানেন? আল্লাহ তায়ালা এর উত্তরে বলেনঃ
“হে (আমার) জাতি, তোমরা তোমাদের মালিকের কাছে গুনাহখাতা মাফ চাও, অতপর তোমরা তাঁর দিকেই ফিরে আসো, তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘমালা পাঠাবেন এবং তোমাদের (আরো) শক্তি যুগিয়ে তোমাদের (বর্তমান) শক্তি আরো বাড়িয়ে দিবেন, অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে (তাঁর ইবাদাত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না” (সূরা হুদ- ১১: ৫২)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“যদি কোন মানুষের এক উপত্যাকা ভর্তি সোনা থাকে, তবে সে তার দু’টি উপত্যাকা (ভর্তি সোনা) হওয়ার আকাঙ্খা করে। তার মুখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই পূর্ণ হয় না। আর যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।” (রিয়াদুস সালেহীন ১ম খন্ড, হাদীস নং-২৩)
১০. ক্ষমাশীল না হওয়া
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা সাহাবাদের নিয়ে মসজিদে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি মসজিদে প্রবেশ করা একজন ব্যক্তিকে জান্নাতি হিসেবে বর্ণনা করলেন। তিনি তিনদিন এমন করলেন এবং প্রত্যেকবারই মসজিদে প্রবেশকারী একই ব্যক্তিকে এ কথা বললেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) জানতে চাইলেন যে, কি এমন গুণ তার মধ্যে আছে যার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জান্নাতি হিসেবে সম্বোধন করলেন। অতপর, তিনি ঐ ব্যক্তির সাথে তিন রাত অতিবাহিত করলেন। তিনি কোন রাত্রেই উক্ত ব্যক্তিকে রাতের নফল নামাজ আদায় করতে দেখলেন না। তাই তিনি ফিরে আসার পূর্বে তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, সে বিশেষ কি আমল করে যার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জান্নাতী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ব্যক্তিটি বললেন, “আপনি আমাকে যে রকম দেখেছেন আমি এর চেয়ে বেশি কিছু নয়”। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) চলে যাওয়ার পর ব্যক্তিটি আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন, “আপনি আমাকে যে রকম দেখেছেন আমি এর চেয়ে বেশি কিছু নয়, তবে আমার একটা অভ্যাসের কথা আপনাকে বলা হয়নি- রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার পূর্বে আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দেই, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে বা আমার প্রতি অন্যায় করেছে। তাদের প্রতি কোন ক্ষোভ অন্তরে পুষে রাখিনা”। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) তাকে বললেন, “এই কঠিণ গুনটিই তোমাকে এই পর্যায়ের উপযুক্ত করে তুলেছে”। (আহমাদ)
উপরোক্ত হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ একটা শিক্ষা হচ্ছে, ‘সফল ব্যক্তিরা ক্ষমা করে এবং ভুলে যায়’।
সুবহানাল্লাহ, আমরা সফল মুসলিম হতে চাই কিন্তু আমরা এর জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করি? উপরোক্ত বিষয়গুলো আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে নয়। যেটা করা প্রয়োজন তা হলো প্রতিদিনের রুটিনে বিষয়গুলো যুক্ত করে নেয়া এবং আন্তরিকতার সাথে অনুশীলন করা। আর দয়া করে প্রথম চেষ্টাতেই সবগুলো করতে পারবেন বলে ধারণা করবেন না। এক বা দুই সপ্তাহ নিয়ে বিষয়গুলো অনুশীলন করুন। তারপর পরের পর্যায়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও ক্ষান্ত দিবেন না। আবার শুরু করুন। আল্লাহ আন্তরিকভাবে চেষ্টাকারীদের ভালোবাসেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহ আমাদের জন্যই জান্নাত তৈরী করেছেন। জান্নাতে যাওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেগুলো ঠিকমত পালন করলেই কেবল সেখানে পৌছানো যাবে। তাহলেই পরকালীন সেই চির সুখের জান্নাতে যাওয়া যাবে। আর এটাই সত্যিকারের সফলতা। আল্লাহ আমাদের সকলকে একজন সফল মুসলিম হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।“
—————–
১. মূল লেখাঃ https://goo.gl/MNjC31
২. মূল লেখক সম্পর্কে জানতে: https://www.linkedin.com/in/nabilhasan
৩. কোরআনে আয়াতের অর্থ নেয়া হয়েছে ‘কোরআন মাজীদ (সহজ সরল বাংলা অনুবাদ)- ‘হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমেদ’ থেকে।